ভারতে মুসলিম নির্যাতনের মাত্রা দিনকে দিন নতুন মাত্রা ধারণ করছে। বংশের পর বংশ যারা ভারতের নাগরিকত্ব নিয়ে বসবাস করছে তাদেরকে হঠাৎ করে মোদী সরকার বিদেশী আখ্যা দিয়ে বিতাড়িত করতে চাইছে। অথচ ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে মুসলমানরাই সিংহভাগ কাজ করেছে। যদি ভারতের মুসলিমদের বিদেশী আখ্যায়িত করা হয় তাহলে ভারতের স্বাধীনতাকেই অস্বীকার করা হবে।
ভারতীয় দেশত্মবোধক সিনেমাগুলোতে বিভিন্ন সময়ে ব্রিটিশবিরোধী অনেক স্লোগান ব্যবহার করা হয়। হয়তো আপনারা অনেকেই এই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। কিন্তু আপনারা কি জানেন, ভারতের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অধিকাংশ স্লোগানগুলোই ব্রিটিশবিরোধী মুসলমানদের তৈরী!
সে সময় স্বাধীনতার প্রতীক্ষায় উন্মুখ দেশবাসীর ভাবনাকে তুলে ধরতে মুসলিমরা উর্দু ভাষাকে ব্যবহার করে। প্রতিবাদ, মিটিং-মিছিলগুলিকে আরো প্রানবন্ত করতে, মানুষকে বিপ্লবী প্রেরণায় উজ্জীবিত করার জন্য বিভিন্ন গান ও স্লোগান রচনা করেন তাঁরা। সেই সব গান,কবিতা, স্লোগানের কিছু কিছু তো কালজয়ী, আজো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে রচিত হলেও আশ্চর্যভাবে আজকের দিনেও সেগুলো আমাদের কাছে সমানভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ অর্থাৎ ‘বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক’। ভারতীয় মাত্রই এই স্লোগানের সঙ্গে পরিচিত। ভগত সিং প্রথম এই স্লোগানকে বিপ্লবের ময়দানে ব্যবহার করে। এই স্লোগানটি কবি ও স্বাধীনতা যোদ্ধা হসরত মোহানির কলমের ফসল। ‘জয় হিন্দ’ যা কিনা ‘ জয় হিন্দুস্থান’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এই স্লোগানের স্রষ্টা হলেন আবিদ হাসান সফরানি। তিনি ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মী’র একজন প্রথম সারির যোদ্ধা ছিলেন। সুভাষ চন্দ্র বসুর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন।
স্লোগানের পাশাপাশি ভারতীয় বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গানগুলোর ক্ষেত্রেও মুসলিম অবদান চোখ কপালে ওঠার মতো।
১) ‘সারে জাঁহা সে আচ্ছা’। গানটি লিখেছিলেন আল্লামা ইকবাল।
২) ‘বাতান কি রাহ ম্যে বাতান কি নওজওয়ান শহীদ হো’ গানটি কামার জালালাবাদী রচনা করেন।
৩) ‘দেশ ক্যা পেয়ারা’ গানটি মেহেদী আলী খানের লেখা।
৪) ‘ইনসান কি ডগার পে’ এই অনন্য গানটির রচয়িতা শাকিল বাদায়ুন।
৫) ‘নান্না মুন্না রাহী হুঁ’। এ গানটিও নওশাদ ও শাকিলের মিলিত প্রচেষ্টায় অনন্য মাত্রা পায়।
৬) ‘আব তুমহারে হাওয়ালে বাতান সাথীও’। কৈফি আজমীর লেখা গানটিতে কণ্ঠ দেন মহম্মদ রফি।
৭)‘আপনি আজাদী কো হাম’। এই গানটি শাকিল, রফি ও নওশাদ তিনজনের মিলিত উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ ঘটে।