তুরস্কে ঈদুল আযহা তথা কুরবানির ঈদ ‘কুরবান বাইরাম’ নামে পরিচিত। রমজানের ঈদের পর মুসলমানদের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ উৎসব এটি। উসমানীয়রা পবিত্র কুরবানি অত্যন্ত ধুমধাম ও শ্রদ্ধা এবং ভাবগাম্ভীর্যের সাথে পালন কতো। উসমানীয় প্রাসাদে কুরবানি উপলক্ষ্যে ব্যাপক সাজসজ্জা করা হতো। ক্ষমতাসীন সুলতান কুরবানি উপলক্ষ্যে দরিদ্র জনগণের মধ্যে উপহার সামগ্রী বিতরণ করতেন। এদিন সুলতানের সাথে সাধারণ জনগণ সরাসরি দেখা করতে পারতো। গ্রাম শহরগুলোতে উৎসবের আমেজ বিরাজ করতো। উসমানীয় সালতানাতে ইসলামী অনুষ্ঠান-আচারগুলো শুরু থেকেই পালন হয়ে আসলেও মূলত কনস্ট্যান্টিনোপল বিজয়ী মহান সুলতান মুহম্মদ আল ফাতিহ (রহ:) তিনি ইসলামের বিশেষ দিনসমূহ পালনের ক্ষেত্রে আলাদা আইন তৈরী করেছিলেন। রাজকোষ থেকে বরাদ্দ অনুমোদনের রীতি চালু করেছিলেন।

কুরবানির ঈদের দিন উসমানীয় সুলতান ঈদের নামাজের উদ্দেশ্যে বিশাল বহর নিয়ে হাজিয়া সোফিয়া কিংবা নীল মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হতেন। সে সময় রাস্তার দুই ধারে সাধারণ মানুষ সুলতানকে অভিবাদন জানাতো। সুলতানও মাঝে মধ্যে ঘোড়া থেকে নেমে দরিদ্রদের খোজ খবর নিতেন। এভাবে পুরো বহর মসজিদে পৌছে যেত। মসজিদে সাধারণ মুসলমানদের সাথে মিলে নামাজ আদায় ও কোলাকুলি করতেন সুলতান ও তার পাশারা। নামাজ শেষে কুরবানির উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত হাজার হাজার মেষ-দুম্বা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কুরবানি করা হতো এবং গোশত গরীব-দু:খী মুসলমানদের মধ্যে বন্টন করে দেয়া হতো। হাজার হাজার কুরবানির মধ্যে নবী রাসূল, উম্মুল মুমিনীন, সাহাবা ও বিশিষ্টি বুজুর্গদের পক্ষ থেকে কুরবানি করা হতো। উসমানীয়দের তৈরী করা মাদ্রাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠানো হতো। এই দিন বিশেষ ছুটি ঘোষণা করা হতো।
কুরবানির দিন উসমানীয় প্রশাসনের সামরিক কর্মকর্তা এবং বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে বোনাস প্রদান করা হতো। প্রত্যেক সাধারণ সৈন্যদের বোনাসের পাশাপাশি রান্নাকরা গোশত, রুটি, উন্নতমানের হালুয়া ইত্যাদি খাওয়ানো হতো। হাজার হাজার সৈন্য ও পাশাদের একত্রিত করে এই দিনের জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করা হতো এবং নবীজীর প্রতি দরূদ পাঠ করা হতো। সালতানাতের সকল মসজিদগুলোর ইমাম ও আলেম ওলামাদের উপহার ও আর্থিক উপটৌকন পাঠানো হতো। তাদের বিশেষ মর্যাদা প্রদান করা হতো।
কুরবানির দিন কারাবন্দীদের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হতো। পরিবার পরিজনদের সাথে দীর্ঘসময় সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হতো। যেসব বন্দী তাদের সাজার দুই তৃতীয়াংশ সাজা ভোগ করে ফেলেছে তাদের ক্ষমা করে খালাস করা হতো। এসবই হতো সুলতানের নির্দেশে।
সুত্র: ডেইলি সাবাহ, অটোম্যান আর্কাইভ